সাজেদুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার পত্নীতলা (নওগাঁ)
নওগাঁর পত্নীতলায় মোবাইল গেম আসক্তি উঠতি বয়সের কিশোর কিশোরী।
শহরের বিভিন্ন অলিতে গলিতে গেলে দেখা যায় স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে এক জায়গায় মিলিত হয়ে তারা মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। ছেলেমেয়েরা অনলাইনে ক্লাসে কথা বলে বাবা-মার কাছ থেকে অনায়াসে মোবাইল কেনাতে বাবা মাকে বাধ্য করে। আপন গতিতে ছুটে চলছে সময়। সেটিকে ভালো কাজে ব্যবহার না করে গেমের দিকে আসক্ত হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন। আর এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী আজ বিশ্বগ্রামে পরিণত হয়েছে। আজ এক দেশ থেকে আরেক দেশে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই উপকৃত হয়। আবার এই তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মোবাইল গেম প্রযুক্তির অবদান। মোবাইল গেম বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে তরুণরা মোবাইল গেমের প্রতি এতটাই আসক্ত যে, তারা দৈনিক তিন-চার ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল গেমে অপচয় করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালে মোবাইল গেম আসক্তিকে ‘রোগ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর জীবনের সোনালি সময় হলো তরুণ বয়স। কারণ তরুণ বয়সে মানুষ তার জীবনের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। শ্রমশক্তিতে এ সময়টা থাকে উদ্দীপ্ত। যে কোনো বাধা পেরিয়ে সমাজ, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তারুণ্যের শক্তি। এ জন্যই বলা হয়ে থাকে—তারুণ্যই শক্তি।
কিন্তু আজ আমাদের তরুণ সমাজ অনেক সমস্যায় ভুগছে। তার মধ্যে মোবাইল গেম আসক্তি অন্যতম। এর ফলে জীবনের শক্তিদীপ্ত সময়টা অপচয় হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাবনাবাজ গ্রামের সন্তান পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ আলী
বলেন
মোবাইল গেম আসক্তির ফলে দৈনিক তিন-চার ঘণ্টা অপচয় করার কারণে পড়াশোনা ঠিক মতো করতে পারে না। যার ফলে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করে, হতাশ হয়। অনেকে আবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হাসান আলী বলেন
অনেকক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করার ফলে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম চোখের সমস্যা। অবস্থা এরকম হয়েছে যে, চোখের ডাক্তারের কাছে গেলেই প্রথমে জানতে চায় বেশিক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করে কি না। গভীর রাত জেগে গেম খেলার ফলে স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না। মানসিকভাবেও নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ মোবাইল গেম খেলা এবং একা থাকার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা পলাশ বলেন
সামাজিক জীব হিসেবে আমরা সমাজে একত্রে বসবাস করি। সমাজের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় এবং সমাজের কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। কিন্তু মোবাইল গেম আসক্তির ফলে তরুণরা স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে না। ফলে তারা সমাজ থেকে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, শক্তিশালী সমাজ কাঠামো গড়ে উঠতে ব্যাঘাত ঘটছে।
মানসিক অবসাদ দূর করতে বিনোদনের অবশ্যই প্রয়োজন।
তাই বলে বিনোদনের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ নেই। তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগাতে সময় নষ্ট করা রোধ করতে হবে। আমাদের দেশের দায়িত্বশীল মহল কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে মোবাইল গেমে অযথা সময় নষ্ট রোধ করে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়তে ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস করি।
একই সঙ্গে আমরা সচেতন হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের সেবা করতে হবে।