লক্ষ্মীপুরে আদালতে আইনজীবীও কর্মচারীদের হাতাহাতি।
হাছিবুর রহমান
জেলা প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুর।
লক্ষ্মীপুরে একটি মামলার জামিনকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কর্মচারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-৩ এ এমন ঘটনা ঘটে।
ঈদের ছুটি শেষে আজ রোববার আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রত্যাশীরা এসে উপস্থিত হন। কিন্তু আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এরপর বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে জখম হয়।’
এদিকে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানান। আদালত কর্মচারীরা উল্টো আমাদের ওপর হামলা করেছে।
এর আগে গত ৬ জুন রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহমেদ কাউসার উদ্দিন জামানের (৩৫) বিরুদ্ধে সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রফিক উল্যাহ বলেন, ‘আইনজীবী আবু তৈয়বের বাসার গেট কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে আসামিরা। তাদেরকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামি পক্ষেও একজন আইনজীবী শুনানিতে ছিলেন। বিচারক রিমান্ড শুনানি নামঞ্জুর করে মাত্র ১০০ টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন। তাড়াহুড়ো করে আসামিদের জামিন দেওয়াটা অন্য অর্থ বহন করে। আমরা জামিনের বিরোধিতা করলে সেটা আমলে নেননি বিচারক। আমরা মনে করি, বাদি একজন আইনজীবী হওয়ায় ন্যায়বিচার পাননি। তাই বিষয়টি জেলা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং ওই বিচারকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রোববার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে শুধুমাত্র এজলাসে গিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিই। কোনো হট্টগোল বা হামলা হয়নি।