সাব্বির ইসলাম ফাইজী
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদরে ঘোষপাড়া এলাকার শেরপুর টু ফুলবাড়ী বাজার যাওয়ার প্রধান সড়কটি আজ চরম করুণ দশা। বছরের পর বছর ধরে কোনো সংস্কার না হওয়ায় পুরো রাস্তা যেন গর্ত আর ধুলোর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। তার ওপর স্থানীয় কিছু দধি ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার বৃহতাংশ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, বসিয়েছে অবৈধভাবে দোকানপাট, মালামাল রাখছে রাস্তার উপরেই। এই অবস্থায় পথচারী ও যানবাহন চলাচল হয়ে পড়েছে কঠিন, প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
রাস্তার এই জীর্ণ দশা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা ও দখল অবস্থায় থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। রাস্তার মাঝে মাঝে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় এক হাটু পানি। বর্ষা মৌসুমে সেই পানি মিশে যায় কাদার সাথে, সৃষ্টি করে পিচ্ছিল এক পরিবেশ। স্কুলগামী শিশুরা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউই এই রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারেন না। কেউ পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন, কেউবা গর্তে পড়ে বেহাল দশায় পড়ছেন।
রাস্তার পাশে বসা দোকানদারদের নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৪ঘন্টায় থাকছে এসব দখলদারদের খড়ি,বস্তা, কয়লাসহ ময়লা আবর্জনা রাস্তার উপর । শুধু তাই নয়, কেউ কেউ স্থায়ীভাবে ইট, টিন দিয়ে ঘর ও বিল্ডিংয়ের অংশ বানিয়ে ফেলেছে। ফলে রাস্তার প্রস্থ কমে গেছে অর্ধেকে। যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে অফিসে যেতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগে। মাঝে মাঝে এত পানি জমে থাকে যে প্যান্ট তুলে হাঁটতে হয়। কতবার অভিযোগ করেছি, কিন্তু কেউ দেখেও দেখে না।”
রিকশাচালককে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, “একটা গর্তে চাকা পড়ে যাত্রীসহ রিকশা উল্টে যায়। লোকজন রাগারাগি করে, কিন্তু আমাদের কী দোষ? এই রাস্তা দিয়ে তো রিকশা চালানোই যায় না। একটা সময় ছিল যখন এই রাস্তায় গাড়ি দৌড়াতো, এখন মানুষ হেঁটে চলতেই ভয় পায়।”
রাস্তার এমন করুণ অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর [নিমাই ঘোষ] বলেন, “আমি বিষয়টি জানি। আমরা ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। তাদের পক্ষ থেকে জরিপ করা হয়েছে, শিগগিরই সংস্কারকাজ শুরু হবে।”
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই ‘শিগগিরই’ শব্দটি তারা শুনছেন বছরের পর বছর ধরে, কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয় না। তারা প্রশ্ন তুলছেন, রাস্তা সংস্কারে এত বিলম্ব কেন? বরাদ্দের অর্থ কোথায় যাচ্ছে?
এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, রাস্তা শুধু চলাচলের জন্য নয়, এটি একটি এলাকার যোগাযোগ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। অথচ সেই রাস্তাই যদি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়, তবে তা স্থানীয় প্রশাসনের চরম অবহেলারই প্রমাণ।
তারা দাবি জানাচ্ছেন—তৎপরভাবে রাস্তা সংস্কার, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করে স্বাভাবিক চলাচলের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। তা না হলে আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।