মধ্যাহ্নভোজে বিএনপি নেতা আলম অপতথ্যে দলীয় নেতা কর্মীদের অসন্তোষ
স্টাফ রিপোর্টার আদিলুর রহমান গফরগাঁও ময়মনসিংহ
এক সময়ের সন্ত্রাসের জনপদ গফরগাঁওয়ে এখন স্বস্তির আবহ। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গফরগাঁও থেকে পালিয়ে যান দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। তাঁর জামানায় বিএনপি’র নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর দমন-নিপীড়নে গফরগাঁও রূপ নেয় এক জুলুমের রাজ্যে। দেশের গণমাধ্যমেও এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। ভীতসন্ত্রস্ত সেই গফরগাঁওয়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা আলমগীর মাহমুদ আলম। দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে ফ্যাসিবাদকে চিরতরে নির্মূল করতে গঠনমূলক রাজনীতির নানা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু সম্প্রতি বিএনপির এই নেতাকে ঘায়েল করতেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে ফ্যাসিস্টের সাঙ্গপাঙ্গরা অপতথ্য ছড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার মশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মিলন ফকিরের বাড়িতে না কী তিনি ভুরিভোজে অংশগ্রহণ করেছেন এমন প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে তাকে হেনস্থা করার কূটকৌশল থিওরি প্রয়োগ হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ইন্ধনে-ইশারায়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে রোববার (২৫ মে) স্থানীয় মশাখালী ইউনিয়নে প্রয়াত বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি’র সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
নিজ দলের একজন শীর্ষ নেতার আগমনের খবর আগেই জানতে পারেন গফরগাঁও পাগলা থানা বিএনপি’র সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মশাখালী ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক চমক ফকির। তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় প্যান্ডেল করে দলটির নেতাকর্মীদের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সেই মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন আলমগীর মাহমুদ আলম।
মধ্যাহ্নভোজের সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। এই ছবির ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগ নেতা মিলন ফকিরের বাড়িতে ভুরিভোজে বিএনপি নেতা, আকর্ষণীয় এমন হেডলাইনে চলছে অপতথ্যের তাণ্ডব। এমন নির্লজ্জ কায়দায় মিথ্যাচারে বিস্মিত ও হতবাক ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলম, ক্ষুব্ধ দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও। তাদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ-অসন্তোষ।
গফরগাঁও পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশকে বলেন, ‘মিলন ফকির এবং চমক ফকির সহোদর দু’ভাই হলেও তাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। মিলন ফকির ৫ আগস্টের পর থেকেই এলাকা থেকে পালিয়েছেন। ওইদিনের কবর জিয়ারতের অনুষ্ঠানে আমাদের নেতা আলমগীর মাহমুদ আলমের সঙ্গে আমরা অনেকেই ছিলাম। আমাদের সম্মানেই পোড় খাওয়া বিএনপি নেতা চমক ফকিরের বাড়িতে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছিলেন। ছবিতে দেখবেন মিলন ফকিরের কোন অস্তিত্বই নেই। মূলত রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করতেই এমন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে একটি সুযোগ-সন্ধানী মহল। অবশ্যই এর পেছনে পলাতক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যের হাত রয়েছে।’
পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহাবুবুল ইসলাম ইমন কালের আলোকে বলেন, ‘যারা এমন ঘৃণিত অপপ্রচার চালাচ্ছে তাঁরা মূলত ফ্যাসিস্টের দোসর। এরা বিভিন্ন সময়ে বিনা ভোটের সাবেক পলাতক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিলেন। নানাভাবে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতনে বাবেলকে মদদ জুগিয়েছেন। এরাই এখন ভোল পাল্টে বিএনপি’র বড় শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিজেদের জাহির করতে চাচ্ছেন। গফরগাঁওয়ের বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমাদের নেতা আলমগীর মাহমুদ আলমকে নিয়ে এসব প্রোপাগাণ্ডা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর গফরগাঁওয়ের পরিস্থিতিও ছিল বিস্ফোরণমুখ। আওয়ামী লীগের অপকীর্তিতে সংক্ষুব্ধ ছিলেন সাধারণ মানুষ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তাঁরা নানাভাবে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য বাবেল গোলন্দাজের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনও সুবিচার পাননি। নতুন পরিস্থিতিতে শক্ত হাতে গফরগাঁওয়ে বিএনপির রাজনীতির হাল ধরেছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম। তিনি প্রতিনিয়ত গফরগাঁওয়ের নানা প্রান্ত ঘুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করছেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে প্রাণান্তকর প্রয়াস নিয়েছেন। জনসমর্থনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের দূরে রাখতে প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কোন অবস্থাতেই গণঅভ্যুত্থানের অর্জন যেন বিনষ্ট না হয় সেই বিষয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক রাখছেন। স্বভাবতই তাঁর এসব কর্মযজ্ঞ ফ্যাসিবাদের স্বপক্ষের এমনকি দলীয় কোন কোন নেতার পছন্দ হয়নি। তাঁরাই তাকে টার্গেট করে এসব অপপ্রচারের কলকাঠি নাড়ছেন। এসব এখন দিবালোকের মতোই পরিস্কার।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম কালের আলোকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা চমক ফকিরের সঙ্গে বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের ছবিটি বিকৃত করে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন ফকিরের নাম জুড়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাকে বিস্মিত ও হতবাক করেছে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এসব অপপ্রচারে আমি বিচলিত নই মোটেও। আমরা গত ১৫টি বছর আওয়ামী লীগের স্বৈরতন্ত্র, দু:শাসন ও লুটপাটের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছি। এখন আমাদের একটিই লক্ষ্য রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া, যেটি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আগামীর বাংলাদেশের কাণ্ডারি তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করছি। আগামী দিনগুলোতে যাতে ফ্যাসিস্টরা আর ফিরে আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা আমাদের সকলকে মিলে করতে হবে। জনগণের দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদ চিরতরে নির্মূল হয়।’