মেহেরপুরে জমে উঠেছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাট
এস এ খান শিল্টু জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর ;
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রায় শত বছরের পুরনো এই হাটটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
প্রতিটি হাটে এখন ভিড় করছেন পশু বিক্রেতা ও ক্রেতারা। কেউ গরু ও ছাগলের দড়ি হাতে ক্রেতার জন্য অপেক্ষায়, আবার কেউ খুঁজছেন পছন্দমতো কোরবানির পশু। এই হাট থেকে জেলার চাহিদা পূরণ করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে কোরবানিযোগ্য পশু।
উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের খামারি শাজাহান আলী বলেন, “শিক্ষিত বেকার যুবকদের যদি খামার গড়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে বেকারত্ব দূর হবে এবং তারা স্বাবলম্বী হবে। গরুকে সন্তানের মতো করে লালন-পালন করি, কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করি না।”
বালিয়াঘাট গ্রামের খামারি মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার যদি বিনা সুদে ঋণ দেয়, তাহলে আরও অনেক যুবক এই পেশায় আগ্রহী হবে।” অন্যদিকে, তেরাইল গ্রামের খামারি হেলাল উদ্দিন জানান, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রচণ্ড গরমে পশু পালন কঠিন হয়ে পড়েছে, তবুও তিনি পরিবার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন গরু বিক্রির প্রস্তুতিতে।
হাটে গরু কিনতে আসা প্রবাসফেরত জিয়া হোসেন বলেন, “দাম বেশি, তবে কোরবানির জন্য কিনতেই হবে। আজ না হলে পরের হাটে আসব।” অন্য এক ক্রেতা জানান, “গরু পছন্দ হয়েছে, দাম বেশি হলেও কিনেছি।”
ছাগল ব্যবসায়ী লালচাঁদ বলেন, “বড় ছাগলের চাহিদা বেশি, তাই বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাগল সংগ্রহ করছি।” গরু ব্যবসায়ী জামরুল জানান, “এবার হাটে গরুর সরবরাহ ভালো, দামও সন্তোষজনক।”
বামন্দী পশুহাটের ইজারাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, “প্রতারণা রোধে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। প্রশাসনও আমাদের সহযোগিতা করছে।”
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১,৪০,৮৩৮টি। এর মধ্যে গরু ৪১,৫৭৮টি, ছাগল ৯৬,৮৪৫টি, মহিষ ৩৮৫টি এবং ভেড়া ২,০৩০টি। কোরবানির চাহিদা প্রায় ৪২ হাজার হলেও অতিরিক্ত পশুর সরবরাহ থাকায় এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পশু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, “বামন্দী পশুহাটে আমাদের মেডিকেল টিম মোতায়েন রয়েছে, যাতে কোনো পশু অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়।”
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, “বামন্দী পশুহাটে পুলিশ মোতায়েন, প্রশাসনিক নজরদারি এবং জাল নোট সনাক্তকরণ মেশিনসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।