মোঃ রমজান আলী, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
শরিফুল ইসলাম, বয়স ১৩ বছর। অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা। সাত বছর বয়সেই হারিয়েছে বাবাকে। কয়েক বছর না যেতেই তার মা চলে যান নতুন সংসারে। তখন ছোট্ট শরিফুলের জন্য এগিয়ে আসেন এক মাদরাসা শিক্ষক। বছরখানেক আগে তাকে তার মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। কায়দা ও আমপারা শেখার পর মাত্র ছয় মাসেই পবিত্র কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছে সেই শরিফুল।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের ঈদুলপুর গ্রামের আজিজার-জুলেখা দম্পতির ছেলে শরিফুল ইসলাম। সে এলাকার দারুত তাকওয়া মডেল মাদরাসার শিক্ষার্থী। মাত্র ছয় মাসে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হওয়ায় খুশি তার মা ও স্থানীয়রা। আনন্দিত মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।
স্থানীয়রা জানান, যখন শরিফুলের বয়স মাত্র সাত বছর তখনই তার বাবা মারা যান। বাবা হারা শরিফুলের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অভাবের সংসারে প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ঠিক সেই সময়ে দারুত তাকওয়া মডেল মাদরাসার পরিচালক মুফতি হাসান আহমেদ আফেন্দী শিশুটির পাশে দাঁড়ান। গত বছরের ডিসেম্বরে তার ব্যক্তিগত খরচে শিশুটিকে মাদরাসায় ভর্তি করে দেন।
এদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর নতুন সংসারে চলে যাওয়া শরিফুলের মা জুলেখা বেগম সন্তানের ভরণপোষণ দিতে পারেননি। দিতে পারেননি পড়ালেখার অর্থের যোগান। কিন্তু সন্তানের টানে মাঝেমধ্যে ঠিকই ছুটে আসতেন মাদরাসায়। খোঁজ রাখতেন শরিফুলের। সন্তানের এই অর্জনে খুশি মা জুলেখা। এ জন্য তিনি মাদরাসার পরিচালক হাসান আহমেদ আফেন্দীর আন্তরিকতা, প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতাকে স্মরণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাফেজ শরিফুল ইসলাম বর্তমানে উপজেলার জায়গীরহাট পুরাতন গরুহাটি সংলগ্ন দারুত তাকওয়া মডেল মাদরাসায় পড়ালেখা করছে। তার এই অর্জন মাদরাসার অন্য শিক্ষার্থী এবং এলাকার মানুষজনকে কোরআন শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাজু মিয়া জানান, ছেলেটা (শরিফুল) খুব মেধাবী। তার এই সাফল্যে আমরা গ্রামবাসী গর্বিত। ছেলেটিকে যদি সরকারি সহযোগিতা করা যায়, তাহলে সে আরও উন্নতি করতে পারবে।
শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি বড় হয়ে বরেণ্য আলেম হতে চাই। ইসলামের খাদেম হতে চাই। আল্লাহ যেন আমাকে কবুল করেন।
শিশুটির শিক্ষক দারুত তাকওয়া মডেল মাদরাসার পরিচালক মুফতি হাসান আহমেদ আফেন্দী বলেন, শরিফুল খুবই মেধাবী ও উদ্যমী। বাবা-মাকে হারানো এই শিশুটিকে ছোটবেলা থেকে আমার সঙ্গে রেখেছি। মসজিদ ও মাদরাসামুখী শরিফুল কায়দা, আমপারা শেষ করলে গত বছরের ডিসেম্বরে আমার মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। ছয় মাসেই সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছে।
তিনি আরও বলেন, শরিফুলের এমন অর্জনে আমাদের সবাই খুবই খুশি। তার এই সাফল্যে দারুত তাকওয়া মডেল মাদরাসার নাম উজ্জ্বল হয়েছে। আমি তার সর্বোচ্চ উন্নতি কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাকে অনেক বড় আলেম হিসেবে কবুল করুন সেই দোয়া করি।