মালিকুজ্জামান কাকা, দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
যশোরের মনিরামপুরে নাগরিক দুর্ভোগ ভবদহ প্রভাবিত এলাকায় বোরোচাষীদের কান্না থামছে না। জলাবদ্ধ বিল থেকে সেচযন্ত্র দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে দেরিতে হলেও বোরো ধান আবাদ করে কৃষক ভাল ফলন পাবার আশায় বুক বেঁধেছিলো।
কিন্তু তাদের সেই আশা ভঙ্গ হয়েছে স্বপ্ন মাজরা পোকার আক্রমনে। ধানের বাম্পার ফলনের আশা ছিল। কিন্তু এখন ফসল ঘরে তুলতে ধান কর্তন করতে যেয়ে মাজরা পোকার আক্রমনে ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে অধিক মাত্রায় খরচ খরচা করে ধান আবাদ করে কাঙ্খিত ফলন না পেয়ে তারা এখন মহাচিন্তায় পড়ে গেছে।
ধার-দেনা পরিশোধ করতে না পেরে পথে বসার উপক্রম অনেকের।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দী গ্রামের বোরোচাষী সঞ্জয় জানান- টাকার বিনিময়ে বিলের জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে ধারদেনা করে দেড় বিঘা জমিতে বোরোধান চাষ করি। ধানের ক্ষেতে সেচ, সার ও অন্যান্য পরিচর্যা বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ধানের ফলন দেখে আশা হয় কাঠা প্রতি দুইমন করে ফলন পাবো। খরচ বাদে বেশ লাভের আশা ছিল। কিন্তু সর্বনাশা মাজরা পোকা আশা শেষ করেছে।
এখন কাঠা প্রতি ২০/২৫ কেজি ধান পাবো কি না সন্দেহ আছে। প্রচন্ড গরমে মাঠ থেকে কাধে করে তিনি নিজেই ধানের বোঝা নিয়ে রাস্তায় এনে সাজাচ্ছেন। কামলা বা জন কেনার টাকা নেই। লোকশান পোষাতে কষ্ট করে নিজের ধান ঘরে তুলছেন।
মনোহরপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, চার বিঘা জমিতে বোরোধান আবাদ করি। ভাল ফলনের আশা ছিলো। কিন্তু মাজরা পোকায় সেই আশা বরবাদ।
তিনি বলেন, টাকা ধারদেনা করে অতিকষ্টে চারবিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। বাম্পার ফলনে কাঠা প্রতি দুইমন করে ধান ফলনের আশা ছিলো। কিন্তু আমার সব শেষ! এখন চার বিঘায় যে ধান পাবো তা আমার বছরের চালের চাহিদা কোন রকমে মিটতে পারে। ধান আবাদ করে যে টাকা দেনা হয়েছেন তা পরিশোধ করা নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত।
মাজরা পোকার আক্রমণে বহু কৃষকের আবাদকৃত ধানের ক্ষতির কথা ভবদহের বিল কেদারিয়ায় শোনা যায়। জানা যায়, এই উপজেলার কুলটিয়া, হরিদাসকাটি, নেহালপুর, মনোহরপুর, ঢাকুরিয়া, দূর্বাডাঙ্গা, খানপুর ইউনিয়নসহ ভবদহ অধ্যুষিত বিলাঞ্চলে এবার বোরো ধানের আবাদ করেছিলো কৃষক।
ভবদহে বেশি জলাবদ্ধতার শিকার বিল বোঁকড় ও বিল কেদারিয়া, আড়পাতার বিল, হরিণার বিল, সামন্দডাঙ্গার বিল, বিল শালিখাসহ আশপাশের জলাবদ্ধ বিলাঞ্চল থেকে সেচপাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে এবার বোরো ধানের আবাদ করে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার মহাউৎসবে মাতে কৃষক।
উপযুক্ত আবহাওয়া ও চাষাবাদে ভবদহের বিলাঞ্চলসহ উপজেলা জুড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা ছিল। পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে নারী-পুরুষ সমানতালে ব্যস্তও হয়। ভাল ফলন পাবার আশায় কৃষকের চোখে মুখে ছিল আনন্দের হাসি!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবদহ অধ্যুষিত বিলকেদারিয়ায় কৃষক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে দেরিতে ধানের আবাদ করে। ফলন বেশ হয়। কিন্তু ধান পাকতে দেরি হওয়ায় ধান কর্তন করতে বিলম্ব হয়।
এর মধ্যে কাচা-পাকা ধানে ব্যাপকহারে মাজরা পোকার আক্রমন করে। মাজরা পোকা দমনে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে না পারায় বহু কৃষক ধানের ক্ষেত পোকার আক্রমনে মারাত্বক ক্ষতির শিকার হয়।
মাজরা পোকার দমনে করনীয় কী তা নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিকট থেকে তেমন কোন পরামর্শ কৃষক পাননি বলে অভিযোগ অধিকাংশ কৃষকের।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ মাহমুদা আকতার জানান, উপজেলা কৃষি অফিস সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তাদের সরেজমিনে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতায় m এবার বোরো ধানের ভাল ফলন হয়েছে। কিছু এলাকায় মাজরা পোকার আক্রমণে ফলন ব্যহত হয়েছে শুনেছি। তবে তার পরিমাণ খুব বেশী না।