স্টাফ রিপোর্টার রাব্বানী বাপ্পি
রাজধানীর আদাবরে নিয়ম ভেঙে একটি ভবনে দুটি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনায় মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনও হয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আদাবর এনওসিএসের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আয়াতুল্লাহ ইমরান আলী অভিযুক্ত মিটার রিডারকে রক্ষা করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
এক গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, আদাবর এনওসিএস-এর ঢাকা উদ্যান ফিডারের অধীন নবীনগর হাউজিংয়ের ৬ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি উচ্চচাপ (এইচটি) সংযোগ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নিয়ম অনুযায়ী একই স্থাপনায় একাধিক বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু মিটার রিডার ইলিয়াস ও তার সহকর্মী হাছান মাহমুদ ভবনটির নিচতলায় থাকা একটি দোকানে ভিন্ন হোল্ডিং নম্বর দেখিয়ে এলটিসিটি মিটার সংযোগ প্রদান করেন।
জানা গেছে, অবৈধভাবে দেয়া সংযোগটি ৫৩৩/১ মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ঠিকানার মো. সামসুদ্দিনের নামে অনুমোদিত। যার মিটার নম্বর ১৫৯৩২০৮৯ এবং কাস্টমার নম্বর ৩১৬৫৪৩৬৫।
স্থানীয় কয়েকজন দোকান মালিক অভিযোগ করেন, নির্বাহী প্রকৌশলী আয়াতুল্লাহ ইমরান আলীর প্রশ্রয়ে আদাবর, নবীনগর হাউজিং, ঢাকা উদ্যান হাউজিং, ও চন্দ্রিমা মডেল টাউনে বহু অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি টের পেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে ইমরান আলী তার লোকজন দিয়ে অভিযুক্ত সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন এবং মিটার খুলে নিয়ে আসেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, এমন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হলে ডিপিডিসির কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের উপস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু তিনি কোনো কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এককভাবে ব্যবস্থা নেন এবং অভিযুক্ত মিটার রিডারদের বিরুদ্ধেও কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেননি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নির্বাহী প্রকৌশলী আয়াতুল্লাহ ইমরান আলী জানান, তিনি একজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেছেন। তবে ঘটনাটি তার আগে জানা ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি। এখনও পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন।
এদিকে ডিপিডিসি’র শ্যামলী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তরিকুল ইসলাম বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, “একই স্থানে দুটি মিটার স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। কেউ তা করে থাকলে তা স্পষ্ট অনিয়ম। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত মিটার রিডার ইলিয়াস জানান, তিনি উত্তম নামে এক মিটার রিডারের কাছ থেকে আবেদনের ফাইলটি পেয়েছিলেন এবং ধারণা করছেন, ওই মিটার রিডার আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকতে পারেন। তবে পরবর্তীতে ফাইলটির বিষয়ে তিনি আর কিছু জানেন না বলেও দাবি করেন।
তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মিটার রিডার হাছান মাহমুদ ও ইলিয়াসের যৌথ উদ্যোগেই এই অবৈধ সংযোগটি প্রদান করা হয়, এবং বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলী আয়াতুল্লাহ ইমরান আলীর জানা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, এ সংযোগ প্রদানে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষের উচিত, অবিলম্বে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।