সজিব শিকদার জেলা প্রতিনিধি( বাগেরহাট)
সুযোগ-সুবিধার জন্য এসব কর্মকর্তা নৌকাপ্রতি আদায় করেছেন ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে লোকসানে পড়ছেন তারা। পাশাপাশি রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। গোলপাতার ঝাড়ের মধ্যে বাঘ লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা থাকে। এরপরও জীবিকার তাগিদে বনে এ পাতা কাটতে যেতে হয় জানিয়ে তারা বলেন, লোকালয়ে আনার পর এক কাউন (১৬৮০টিতে এক কাউন) ভালো গোলপাতা ৩২০০ টাকা বিক্রি হয়। আবদুস সালাম নামে কয়রা এলাকার একজন বাওয়ালি বলেন, ৫০০ মণ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গোলপাতার নৌকায় সাকল্যে সরকারি রাজস্ব আসে ১২ হাজার টাকার মতো। বন অফিস থেকে অনুমতি নেওয়ার সময় বন কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত টাকা বখশিশ, এরপর কুপে তল্লাশি, ঘের দেওয়া, ঘাটে তল্লাশি, সিটি কাটানো (পারমিট হস্তান্তর) সহ বিভিন্ন অজুহাতে সবমিলিয়ে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। তারপরে রয়েছে বনদস্যুদের চাঁদা। সুন্দরবনজুড়ে বেড়েছে বনদস্যুদের উৎপাত। সালাম বলেন, এসব টাকা দিতে গিয়ে ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন তারা। এ কারণে নৌকায় তারা বেশি করে গোলপাতা ও কাঠ বোঝাই করতে বাধ্য হয়েছেন।
সুন্দরবনসংলগ্ন দাকোপের সুতারখালী এলাকার বাওয়ালি-মহাজন আবু মুছা সানা বলেন, এমনিতেই গোলপাতার চাহিদা কমে গেছে। তারপর পদে পদে এত টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। অনেক বনজীবী লোকসানে পড়ে গোলপাতার ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমিও আগামী মৌসুমে আর গোলপাতা কাটতে সুন্দরবনে নৌকা ঢুকাবো না। কয়েকজন কূপ কর্মকর্তা, ও বনরক্ষী গোলপাতা আহরণ মৌসুমে বাওয়ালি-মহাজনদের সামান্য সুযোগ করে দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এ টাকা বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
খুলনা রেঞ্জের গোলপাতা কুপ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বাওয়ালিদের কাছে আমার কোনো দাবিদাওয়া নেই। তারা কিছু দিলে ভালো কথা, না দিলেও কোনো দাবি নেই। গোলপাতার আড়ালে গাছ কাটার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি গোলপাতা নৌকা পাহারা দেওয়া তো আমার একার পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে নির্ধারিত রাজস্বের বাইরে বাওয়ালীদের কাছ থেকে ঘুস আদায়ের বিষয় জানা নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ।
বন সংরক্ষক বলেন, সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধ দমনে সচেষ্ট রয়েছেন বন কর্মকর্তা ও রক্ষীরা। এ ধরনের কাজে বন বিভাগের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোলপাতার সঙ্গে বন থেকে কোনো গাছ কাটতে পারবেন না বাওয়ালিরা। এমনকি নৌকায় ঝুল হিসেবেও কাঠ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বনদস্যুদের তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী এমন কোনো বনজীবী এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বনদস্যুদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কথা শুনেছি।