উথান মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি :
মহামান্য রাস্ট্রপতির আদেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক বদলির ১ মাসেও কর্মস্থল ছাড়েনি পিরোজপুর নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) রনজিৎ দে। প্রায় শতকোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী এক অদৃশ্য শক্তির বলে বারবার পূর্ণবহাল থাকায় সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তার বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া উপজেলা শিংগা গ্রামের বাসিন্দা হরিদাস হাওলাদার শিপন গত ৬ জানুয়ারি প্রধান প্রকৌশলী বরাবর, ২৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব বরাবর এবং ৫ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন কাজ না করা সত্বেও নির্বাহী প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় শতকোটি টাকা বিল দিয়েছেন। এছাড়াও ভান্ডারিয়ার ইফতি টিসিএল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন কাজ করা ছাড়াই ৮৯ কোটি টাকা বিল দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিৎ দে-কে গত বছরের ১৪ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট বিভাগ কুড়িগ্রামে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। তিনি ২৮ নভেম্বর বিভিন্ন কৌশলে তার প্রত্যাহারাদেশ স্থগিত করান। আবারও মহামান্য রাস্ট্রপতির আদেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগ গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পূণরায় বদলির আদেশ দেন। কিন্তু অজ্ঞাত শক্তির বলে তিনি স্ব-পদে বহাল রয়েছেন। গত বছরের ৩০ জুন রনজিৎ দে পিরোজপুর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি বন্যা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে প্রকল্প অফিসে কর্মরত ছিলেন।
ঠিকাদার মো. মামুন মিয়া বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিৎ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পরেছেন। তার বদলির অদেশ হলেও অদৃশ্য শক্তির কারনে তিনি স্ব-পদে বহাল রয়েছেন। আমারা সাধারণ ঠিকাদারেরা শঙ্কিত।
নাম প্রকাশ না শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, এ ইঞ্জিনিয়ার মহা দূর্ণীতিবাজ এবং অফিসে অনিয়মিত। তার পছন্দের ঠিকাদারদের সাথে আতাত করে কাজ ভাগিয়ে দেন। কাজ না করলেও সেই সকল প্রতিষ্ঠানকে শতকোটি টাকা বিল প্রদান করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার অফিসে আমার মোটা অংকের বিল বকেয়া রয়েছে। আমি প্রকাশ্যে কিছু বললে আমার সমস্যা হয়ে যাবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার শক্তি তো দেখেছেন? দু‘বার বদলির আদেশ হলেও শক্তির কারনে স্ব-পদে বহাল রয়েছেন।
মো. আব্দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বলেন, কাজ না করলেও ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারকে টাকা দিয়েছেন। এ কাজ আদৌ হবে কিনা জানিনা। আমরা সাধারণ মানুষ ইঞ্জিনিয়ারের এ কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিৎ দে সরাসরি কথা বলতে রাজি হন নি, এমনকি মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি কলগুলো কেঁটে দেন।
পিরোজপুর জেলা দুদক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তার সময়ের কিছু ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে ফাইল সংগ্রহের জন্য কিছু দিন সময় দেয়া হয়েছে। ফাইলগুলো গুছিয়ে সে চলে যাবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ মিয়া বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না, তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।