এ বি এম রব্বানী বাপ্পি স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)-তে নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি ও অর্থ) পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে অনিয়ম ও অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের ইউনিফাইড সার্ভিস রুল অনুসারে, এই পদে নিয়োগের জন্য কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন বা বিতরণ সংস্থায় উচ্চপদে অন্তত ৫(পাঁচ) বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এই নিয়ম উপেক্ষা করে তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) এবং অক্টোবরে নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপে তা বিলম্বিত হয়েছে। সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিকল্পিতভাবে নিজের সুবিধাজনক প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে কৌশল অবলম্বন করছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) পদে তিনজনের নাম ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে—
১. হেমায়েতুল ইসলাম – বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড
২. নূর হোসেন – তিতাস গ্যাস
৩. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী – বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিজ্ঞতা
তবে অভিযোগ রয়েছে, এই তিনজনের কেউই বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী এই পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য নন।
নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) পদেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, এই পদটি সৃষ্টি করার পেছনে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও ডিপিডিসির সাবেক এমডি বিকাশ দেওয়ানের বড় ভূমিকা ছিল। তার সময়ে আইসিটি ও সফটওয়্যার কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে সাড়ে ৮ লাখ প্রিপেইড মিটারের কেনাকাটায় অনিয়মের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয় এবং এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়। এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন ডিপিডিসির সাবেক এমডি বিকাশ দেওয়ান, সাবেক আইসিটি পরিচালক শহিদুল ইসলাম ও জিএম রবিউল।
শহিদুল ইসলামকে নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) পদে বসানোর মাধ্যমে শুরু হয় অনিয়ম। পরবর্তী সময়ে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে একই পদে বসানো হয়, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এমডির মেয়াদ শেষ হলেও, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ একটি গোষ্ঠীর সহায়তায় তিনি তার সিন্ডিকেট ধরে রাখেন এবং বিতর্কিত জিএম রবিউলকেও এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকও এই বিতর্কিত পদে তার পছন্দের ব্যক্তিকে বসানোর জন্য মরিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদটির কার্যকারিতা তেমন নেই, বরং এটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থের অপচয় মাত্র।
ডিপিডিসির একটি অংশের দাবি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে চাইছেন এবং এর অংশ হিসেবে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন।
ডিপিডিসিতে বারবার এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করা, যাতে প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন বজায় থাকে এবং দুর্নীতির অবসান ঘটে।