লক্ষ্মীপুর, রামগঞ্জে মোঃ নুরুন্নবী সোহেল,
৩৭ জন গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা নিয়ে। পালিয়ে গেছেন রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিসের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় আনোয়ারকে আসামি করে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে প্রতারণা, চেক ডিজঅনারসহ ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। যা বর্তমানে পিবিআই এবং জেলা ডিবি অফিস কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। উপজেলা ডাকঘর অফিস সূত্র জানায়, রামগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের নরিমপুর গ্রামের বাঁশয়ালা বাড়ির মৃত আবু সাইদের ছেলে আনোয়ার হোসেন তৎকালীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে উপজেলা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে। এর কয়দিন পর তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এশিয়ার অনুমতিক্রমে ডাকঘর অফিসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজের মাধ্যমে সহস্রাধিক গ্রাহক সংগ্রহ করে। এ সুযোগে আনোয়ার গ্রাহকদের ডাকঘর অফিস থেকে মেয়াদকালীন সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ ডিপোজিট খোলার জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এতে প্রায় সকল গ্রাহক তার লোভনীয় প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়ে লাখ লাখ টাকা গচ্চা রেখে সঞ্চয়পত্র চাইলে আনোয়ার লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র এবং
মোবাইলে লভ্যাংশের মেসেজ গেলে পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এমনটাই অভিযোগ রামগঞ্জের ফাতেমা আক্তারের। তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল ৫ লাখ হয়েছেন সহস্রাধিক গ্রাহক। ফলে গত ৪ টাকা এবং তার স্বামী কামাল উদ্দিন আহম্মদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ইয়াছমিন আক্তারের কাছ থেকে ৪ লাখ, রাবেয়া বেগম নামের গৃহবধূর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এমন অভিযোগ নিয়ে প্রতদিন পোস্ট অফিসসহ ব্যাংক এশিয়া রামগঞ্জে ছুটে এসে গ্রাহকরা জানতে পারেন তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই জমা হয়নি। আনোয়ারের দেয়া সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি, চেকের ফটোকপি কোনোটাই আসল নয়। গ্রাহকদের ধারণা রামগঞ্জ এবং লক্ষ্মীপুর ডাকঘর অফিসের পোস্ট মাস্টারসহ
স্বাক্ষরের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার
চেকের ফটোকপি এনে গ্রাহকদের হাতে
ধরিয়ে দেয়। এরপর দু’একমাস গ্রাহকের
অসাধু ব্যক্তিবর্গ জড়িত রয়েছে আনোয়ারের এহেন কর্মকাণ্ডে। চলতি মাসে আনোয়ার নিরুদ্দেশ হলে বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সঞ্চয়পত্রের টাকা গ্রহণকালে প্রিন্ট ভাউচার দেয়ার নিয়ম থাকলেও আনোয়ার দিয়েছেন হাতে লেখা কাগজের টুকরো। এ ব্যাপারে উপজেলা ডাকঘর অফিস মাস্টার মো. সিরাজ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রতিদিন গ্রাহকগণ পোস্ট অফিসে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানান। এ সময় তিনি বলেন, ২০২৩ সালে রামগঞ্জে যোগদান করেছেন তিনি। তাই আনোয়ারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি তেমন অবগত
নন। আমার পূর্বে রামগঞ্জের দায়িত্বে ছিলেন জসিম উদ্দিন। তার সময়ে আনোয়ার লক্ষ্মীপুর জেলা পোস্ট মাস্টার ইউজার আইডি ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের ফটোকপি এনে দিতেন গ্রাহকদের হাতে। যা বিধি সম্মত ছিল না। রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘর অফিস পরিদর্শক ইমাম মেহেদী বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ২০২৩ সালে রামগঞ্জে যোগদান করেছেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের লক্ষ্মীপুর জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা জানান, উপজেলা ডাকঘর অফিস থেকে যারা সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করবে মাস শেষে লভ্যাংশের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) থেকে সরাসরি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে এসে জমা হবে। এমনটাই নিয়ম। কিন্তু যখন দেখলাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দু’এক মাস গ্রাহকের মোবাইলে মেসেজ যাচ্ছে তখনি নজরে আসে বিষয়টি। পরে খতিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই জমা হয়নি। পরে রামগঞ্জ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৌশলে আনোয়ারের পাসপোর্ট জব্দ করে। এতে আনোয়ার পালিয়ে যায়। পরে তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি। আদালতের মামলার প্রেক্ষিতে থানায় এখন পর্যন্ত কোনো ওয়ারেন্টের কপি হাতে পাইনি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা আদালতের ওয়ারেন্টের কপি থানায় আসলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবে। ওয়ারেন্ট এসেছে এখনো গ্রাহকরা কোন সুফল পাননি।বর্তমানে ঢাকা গাজীপুরে থাকে পরিবারদের নিয়ে ।