শহিদুল ইসলাম খোকন গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রায় পাঁচ শতাধিক ছোট বড় এবং বিশ একরের ঊর্ধ্বে পুকুর ও খাল রয়েছে।এ সকল পুকুর ও খাল বিল দখলে রাখার জন্য
সময়ে সময়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা এবং সমবায় অধিদপ্তরের প্রায় শতাধিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা।
এলাকাবাসী গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কর্মকর্তা, গাইবান্ধা এবং বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর বরাবরে এফ আইডি কার্ড বিহীন ব্যক্তিদের দ্বারা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি গড়ে তোলায় এবং প্রভাবশালী সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের নির্দেশনায় ২৯ শে জানুয়ারি ২০২৪ হতে ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখ ও সময়ের মধ্যে উপজেলা সিনিয়র মৎস্যজীবী কর্মকর্তা গোবিন্দগঞ্জ এবং উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা গোবিন্দগঞ্জ কে অবৈধ ক্ষমতা বলে বাধ্য করে ১৭টি সমবায় সমিতি লিমিটেড অনুমোদন করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৭ টি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ সদস্য সংখ্যা ৩৪২ জন এর FID ধারী প্রকৃত মৎস্যজীবী না হলেও তাদেরকে মৎস্যজীবী হিসেবে প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া হয়েছে।
তৎকালীন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মোঃ আকিবুর রহমান কর্তৃক ১৭টি প্রত্যয়ন পত্র মারফত ৩৪২ জনকে প্রকৃত মৎস্যজীবী হিসেবে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়। প্রত্যয়নে বলা হয় তাদের জেলে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু FID প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
তদন্তে আরো বেরিয়ে এসেছে যে ওই সময় উক্ত ব্যক্তিগণকে জেলে নিবন্ধন ফরম পূরণ করে উপজেলা কমিটিতে রেজুলেশন এর মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়নি এবং অনলাইনে এন্ট্রি প্রদান করা হয়নি। ফলে FID নারী প্রকৃত মৎস্যজীবি সদস্য নন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় গোবিন্দগঞ্জ গাইবান্ধার কার্যালয়ের স্বারক নং ২০১ তারিখঃ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং মতে প্রকাশ। এলাকাবাসী জানান ০৭ জানুয়ারি/২০২৪ ইং এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধার ৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবুল কালাম আজাদ এমপি হওয়ার পর তার অবৈধ ক্ষমতা বলে যে সকল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর অনুমোদন আদায় করা হয় সেগুলো হচ্ছে ঃ কৃষ্ণচূড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ, প্রত্যাশা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড, সন্ধি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লিঃ, চিয়ারগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ, প্রবাহ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ, জোনাকি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, দুরন্ত মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, সোনালী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, জনতা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ, মেঘলা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, পলাশ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, করতোয়া মৎস্যজীবী সবাই সমিতি লিঃ, প্রত্যয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, আশা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ, আলীগ্রাম উত্তরপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ, বন্ধন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এবং দিগন্ত মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ উক্ত ১৭ টি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর অনুমোদন অবৈধ ও বিধিমালা অনুযায়ী সদস্য গ্রহণ করা হয়নি এবং নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অনুমোদন দেওয়ায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার আবেদন নিবেদন দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।যোগসাজসি ভাবে অভিযোগে উল্লেখিত ১৭টি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ গুলোর বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে জেলা সমবয় কর্মকর্তা গাইবান্ধা মহোদয়ের মতামত জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি।
তদন্ত করে মতামত প্রদানের জন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা গোবিন্দগঞ্জ’র নিকট পত্র প্রেরন করা হয়েছে এবং জরুরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাগিদ পত্র দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ গুলোতে কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই অডিট কার্যক্রম চলছে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এই প্রতিনিধি কে জানিয়েছেন, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এর প্রত্যয়ন এবং উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর অনুমোদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ফাইল প্রেরণ করা হয়। অনিয়ম করা হয়ে থাকলে তৎকালীন ক্ষমতাধরগণ করেছে। তিনি আরো বলেন,
যদি কোন তত্ত্বের গোপনীয়তা এবং গড়মিল থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফাইল প্রেরণ করা হবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান,
মৎস্যজীবি সদস্য ছাড়া কোন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ অনুমোদন দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সমাবয় আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে কোন সদস্য মৎস্যজীবী না হইলে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কোন সুযোগ নাই। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসন বরাবরে সুস্পষ্ট মতামত প্রেরণ করেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ রয়েছে। আবেদনকারী এবং সচেতন মহল দাবি জানিয়েছেন, সর্বস্তরের জনগণ কে সাথে নিয়ে অবৈধ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লিঃ এর অনুমোদন বাতিলের জন্য আইনি ব্যবস্থা সহ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
সর্বস্তরের জনগণ অবৈধ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর সকল কার্যক্রম বন্ধসহ নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।