কলমে - আরিফ হাসান
আমি চব্বিশের ছাত্রবিপ্লব নিয়ে কোনো কবিতা লিখিনি।
আমি রাজপথে হেঁটেছি।
আমি রোদ বৃষ্টি দাবদাহ উপেক্ষা করেছি।
আমি মুষ্টিবদ্ধ হাত উর্ধ্বে তুলেছি।
পায়ের ফোস্কা গুলো সাক্ষী মিছিলে আমার লম্বা অভিযানের ।
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বধিরও শুনেছে আমার চিৎকার।
জিজ্ঞেস করো আমার হাতে থাকা জাতীয় পতাকাকে।
মিছিলে সবার সামনে ছিলাম আমিই।
আমি চব্বিশের গনবিপ্লব নিয়ে কোনো কবিতা লিখিনি।
আমি টিয়ারশেল গ্যাসের কুন্ডলির ভিতরে নিজেকে আবিষ্কার করেছি কতশত বার।
পকেটে থাকা টুথপেস্ট মেখেছি মুখে।
পথচারীর দেওয়া পানিতে আবার সজীব হয়ে ফুটেছি রাজপথে।
একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে আমার হার্টবিট দুইশো ছাব্বিশ বিট পার মিনিট ছুঁয়েছে নিশ্চিত।
আমি আবার বলছি,
আমি চব্বিশের ছাত্রবিপ্লব নিয়ে কোনো কবিতা লেখার সাহস পাইনি।
মিছিলের সামনে এগিয়ে গিয়ে বুক পাতে আমার বন্ধু।
মুহুর মুহুর গুলিতে ঝাঁঝরা করে ওর বুক ।
আহ্ রক্তের কি বুদবুদ।
এ যেন রক্তজবা, কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে রাজপথে।
আমি চব্বিশের গনবিপ্লব নিয়ে কোনো কবিতা লেখার সাহস পাইনি।
আমি এগিয়ে গিয়েছি মিছিলের সামনে।
গুলি কর শুয়োরের বাচ্চা বলে চিৎকার করেছি।
আমার রক্তই ছিল আমার অস্ত্র।
ঘাতকের ছিল কামান আর গুলির বিশাল সমাহার।
আমার ছিল বিপ্লবী বন্ধু।
ঘাতকের ছিল স্বৈরাচারের দোসর ,হাতে হাতুড়ি , দেশীয় অস্ত্র আর মাথায় হেলমেট পরা জারজ।
আমার প্রতিরোধ ব্যুহ ছিল বিপ্লবীদের বুক ।
তাদের ছিল হেলিকপ্টার থেকে হামলা করার কৌশল।
আমার ছিল বুকের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যায় ।
বিশ্বাস করুন,
আমি চব্বিশের ছাত্রবিপ্লব নিয়ে কোনো কবিতা লিখতে আসিনি।
আমি এসেছিলাম অহিংস আন্দোলন করতে।
আমি এসেছিলাম মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।
আমি এসেছিলাম বৈষম্যের শিকল ভাংতে।
আমি এসেছিলাম সাম্য সমতা ফেরাতে ।
আমি এসেছিলাম আমার অধিকার চাইতে।
ঘাতকের হাতে ছিল রাষ্ট্রযন্ত্র , সংবাদপত্র।
তারা আমাকে রাজাকার বানালো।
তারা আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিল ।
তারা আমাকে কতশত রাজনৈতিক প্যাচে ঘুরাইলো।
তারা আমার বিপ্লবী বন্ধুকে রক্তাক্ত করলো।
তারা আমার বিপ্লবী বন্ধুকে হত্যা করলো।
তারা আমার মৃত্যু দেহের উপরেও কয়েক রাউন্ড গুলি চালাইলো।
আমি চব্বিশের গনবিপ্লব নিয়ে কোনো কবিতা লেখার সুযোগ পাইনি।
আমার হাতে এখন আর কলম শোভা পায় না।
কারন সে হাত এখন কাফনে মোড়া।
বিশ্বাস করুন,
আমি কোন বিপ্লবী ছিলাম না।
আমি কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলাম না।
আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলাম না।
আমি একজন ছাত্র ছিলাম।
আমি একজন সাধারণ মানুষ ছিলাম।
আমি আপনাদেরই একজন ছিলাম।
আমি এই দেশেরই একজন সন্তান ছিলাম।
জুলাই বিপ্লবে ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো একজন গর্বিত তিতুমীরিয়ান, সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শহীদ মামুন মিয়া ভাইকে নিয়ে লেখা আরিফ হাসানের কবিতা।