মোঃ আবদাল মিয়া মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি,
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখান ইউনিয়নে গত শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর মাগরিবের সময় মন্দির গাও গ্রামের দক্ষিণ টুক এলাকার মলয় কুমার মালাকার নামে এক নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ ব্যাপারে তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন এবং ঘটনাস্থল শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে এলাকায় গেলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২৫ -৩০জনের একটি আক্রমণকারী দল তার বাড়িতে আক্রমণ করে স্ত্রী, যুবতী মেয়ে সহ ২ সন্তান কে মারধোর ও হেনস্তা করে এবং ঘরে প্রবেশ করে ভাংচুর এবং লুটপাট করেছে আক্রমণকারীরা।
তিনি (মলয় মালাকার) এবং তার স্ত্রী জানান, তাদের চতুর্থ সন্তান সুজিত মালাকার (অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র) পার্শ্ববর্তী খেলার মাঠে সহপাঠীদের সাথে ফুটবল খেলতে যায় এবং এলাকার মধ্যে সে একজন ভালো খেলোয়ার হিসেবে থাকে সবাই আমার ছেলেকে জানে। তার ফুটবলের একটি সট মাফুজের মুখে গিয়ে পড়লে সে ব্যথা পেয়েছে বলে শুনেছি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার কিছু ছেলে সুজিত মালাকারকে বিভিন্ন ভাষায় গালি দেয় এবং, মারধোর করে আহত করে তার কাপড়চোপড় ছিড়ে ফেলে, পরবর্তীতে লজ্জা এবং ভয়ে ছিড়া কাপড় নিয়েই অর্ধউ*ল*ঙ্গ অবস্থায় সে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে ঘরে লুকিয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, এ সময় আমি বাসায় ছিলাম না তবে আমি আমার স্ত্রী সন্তান ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনেছি আমার ছেলে সুজিত মালাকার কে মারপিট করার উদ্দেশ্যে ২৫-৩০ জনের একটি দল আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার মেয়ে (ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র) স্ত্রী ও বড় ছেলে (ইন্টার কমপ্লিট) সন্তানদেরকে মেরে আহত করে তারা সবাই আমার ছেলেকে বের করে দিতে বললে তাদের হাতে এবং যাওয়ার সময় আমাদেরকে এখানে থাকতে দেবে না বলেও হুমকি দিয়ে যায়, যা রেকর্ড থেকে সুস্পষ্ট শোনতে পারবেন।
এ সময় অভিযোগকারী মলয় মালাকার মোবাইল ভাঙচুর ও ঘরের মালামাল লুটপাটের অভিযোগও করেন।
সরে জমিন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্থানীয় অন্যান্য হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের সাথে তারা ভয়ে কোন কথা বলেনি এ সময় দুইজন মুসলিম এলাকাবাসী তারা সাক্ষ্য দেয় যে, এ ঘটনা সত্য এবং তারা এখানে আক্রমণ করেছে পরবর্তীতে আমরা যখন রুখে দাঁড়িয়েছি তখন তারা এখান থেকে চলে গেছে।
এদিকে আহতদের একজন দাবি করেছেন আমারে একটা স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে হামলাকারীরা ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক ও হুমকিমূলক স্ট্যাটাস দিচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় মুরুব্বি মোস্তফা মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি হামলার ঘটনা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে সিন্ধুরখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত রবিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য জুন্নুন আহমদের সাথে কথা হলে তিনি জানান বিষয়টি আমি শুনেছি খুবই দুঃখজনক, আমরা হিন্দু মুসলিম সব সময় একসাথে মিলে মিশে থাকি। এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি তবে ঘটনাটি শোনার পর আমি শেষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি, স্থানীয় সকল মুরব্বিদের কে নিয়ে সোমবার সকাল দশটায় একটি বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, আশা করি সকলের সহযোগিতায় শেষ করতে পারবো ।
এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ হামিদ মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি ঘটনাটি যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে সেভাবে ঘটেনি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন খেলা থেকে সমস্যার সৃষ্টি, আমার নাতি ব্যথা পেয়েছে সেখান থেকে তাকে হসপিটালে পাঠানো হয়েছে ।এ সময় তারা জিজ্ঞাসা করতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিল এটাকে তারা অন্য ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে।হিন্দু মুসলিম হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, মূলত আমি অসুস্থ স্ট্রোকের রোগী মানুষ । আমি বাড়িতে ছিলাম না থাকলে হয়তো এমনটা হতো না,আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলিম হিসেবে কোন ভেদাভেদ নেই, আমরা সব সময় মিলেমিশে কাজ করি, আমাদের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে তবে ঘটনাটিকে অন্যভাবে সাজানো হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে এটা ঠিক না......।
আগামীকালকে সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় মাওলানা সাহেব এবং মেম্বার সাহেব শেষ করার চেষ্টা করতেছে কালকে দশটায় বিচার হবে, এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন আমরা কখনো মারামারির সাথে জড়িত না।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান "এমন একটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে আমরা তদন্ত করছি এবং আমি নিজেও এসআই সজীব চৌধুরীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি,এ ব্যাপারে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।