মোঃ সুলতান মাহমুদ
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর পিটিআই অডিটোরিয়ামে তরুণদের নদী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে সচেতন করা এবং তাদের সম্মিলিত শক্তি কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ‘নদী রক্ষায় যুব সম্মেলন’ শীর্ষক এক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন। বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি।
আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সব দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।
গত ৫ আগস্টের পরে গাজীপুরে অবৈধভাবে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন,
বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয়,
তা আমরা জানি।
আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা নদীকে অনেকগুলো কারণে দূষণ করি। তার মধ্যে তিনটি বড় কারণে বেশি দূষিত হয়। একটি হচ্ছে শিল্প দূষণ, সিটি কর্পোরেশন পৌরসভার বর্জ্য ও কারখানার পয়োবর্জ্য। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।
তিনি বলেন,
বাংলাদেশের মানুষ অর্ধেকের বেশি নদীপথে যাতায়াত করে।
এখনো মরে যাওয়া, দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে তরুণ প্রজন্ম। আগামী প্রজন্ম, যাদের জন্য আমরা গাড়ি-বাড়ি করি, টাকা জমাই, সেই আগামী প্রজন্ময় ভয়ংকর সমস্যার সম্মুখীন হবে।
পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব সেটির কবলে পড়বে।
আগামী প্রজন্মকে যদি একটি দুষণমুক্ত নদী না দিতে পারি তাহলে ওরা পানি পাবে কোথায়, মাছ পাবে কোথায়? মাছই যদি না পায় তাহলে ওরা মাছে-ভাতে বাঙালি না হয়ে ফার্মের মুরগি আর ভাতে বাঙালি হবে!
তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিকগুলো নদীতে পড়ে। ফলে কোনো কোনো নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তর পড়ে যায়।
যেগুলো আর পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।
একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে, এই কেমিক্যালগুলো কি হবে।
এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। পরে এসব আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়।
এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নতুন প্রজন্মদের উদ্দেশে বলেন,
উন্নয়নটাকে নতুন প্রজন্মকে নতুনভাবে দেখতে হবে। আমাদের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস।
আমাদের নদীগুলো দূষণের মধ্যে অন্যতম। যে উন্নয়ন আপনার বাতাসকে দূষিত করে, আপনার নদীকে মেরে ফেলে, যে উন্নয়ন আপনার কৃষি জমি কেড়ে নেয়, আপনার মায়ের দুধের সঙ্গে মাইক্রোগ্রাম মিশে যায়।
সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয় আমাদের দেশে একটু সময় এসেছে উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখার। আমরা বড় বড় শপিংমল-ফ্লাইওভারকে উন্নয়ন কথা বলেছি। আপনারা তা বলবেন না।
আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী থাকবে, আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় বন থাকবে, বন্য প্রাণী থাকবে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেনের সঞ্চালনায় সম্মেলনের শুরুতেই ভাচ্যুয়ালি বক্তব্য দেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টার মালয়েশিয়ার ম্যানেজার ড. কালিদাসান কালিসাম।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান,
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন,
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক,
রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ,
বাংলাদেশ কাটার সাকশন ড্রেজার ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ,
বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না, ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক ড. সোহরাব হোসেন সহ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিনের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ সুপার,
আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের অধিনায়ক, ৬৩ বিজিবির অধিনায়ক, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।